একটি ছবি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে ভারতজুড়ে। এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে ছবির ফটোগ্রাফারকে। কী সেই ছবি? ছবিটি মূলত বিয়ের কনের সাজে এক নারীর নগ্ন ছবি। ছবিটি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালই হয়নি, কেউ আবার সেই নগ্ন নারীকে ফটোশপে কাজ করে শাড়ি পরাচ্ছেন, কেউ পরাচ্ছেন ফ্রক।

আসুন ছবিটির একটু বিশ্লেষণ করা যাক। ‘হিন্দু ধর্মমতে বিয়ের ঠিক যেন শুভ দৃষ্টির পরের মুহূর্ত। মাথায় মুকুট। কপালে বড় করে সিঁদুরের টিপ। বাঁ হাতে জোড়া পানপাতা। তাতে মুখের নীচের অংশটুকু ঢাকা পড়েছে। ডান হাতে লক্ষ্মীর গাছকৌটো। খোলা চুলটা সামনের দিকে একটু নামিয়ে দেওয়া।

ঠিক যেন বিয়ের কনে। কিন্তু পার্থক্য এক জায়াগয়। বিয়ের সাজে ওই তরুণীর শরীরে নেই কোন পোশাক। পানপাতা ধরা হাত এবং ডান দিকে পাতিয়ে দেওয়া চুল ঢেকেছে বুক। লক্ষ্মীর গাছকৌটো দিয়ে আড়াল করে রাখা গোপনাঙ্গ।’ ছবির নিচে লেখা প্রিতম মিত্র ফটোগ্রাফি কপিরাইট রিজার্ভড।

ফেসবুক-সহ বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় ছবিটি এখন ভাইরাল। অনেকেই শেয়ার করেছেন ছবিটি। তবে গতকাল থেকে ওই ছবির ভিন্ন রূপ চোখে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেই সেই নগ্ন নারীমূর্তি?

তার জায়গায় রয়েছে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়া একটি মেয়ে। পোজ সেই একই। জানা গেছে, ছবিটি ফটোশপ করেই মডেলকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন কেই একজন। আবার কেউ টপ পরিয়েছেন, কেউ বা ফ্রক। এভাবেই নেটিজেনরা নিজের মতো করে নানাবিধ বেশভূষায় সাজিয়ে নিচ্ছেন ছবিটিকে।

তবে এখানেই শেষ নয়। ইতোমধ্যে ছবির ওই ফটোগ্রাফারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। নিজেদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী পরিচয় দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক দল যুবক ওই সব হুমকি দিচ্ছেন। ফটোগ্রাফারের মাথার দাম ধরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন রাজ সরকার রিংকু নামের একজন।

নিজেকে মালদহের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ফেসবুকে তাঁর পোস্টে ওই আলোকচিত্রীর মাথার দামও ধার্য করেছেন রাজ। এমনকি, মু্ণ্ডচ্ছেদ করার হুমকিও দিয়েছেন। ওই যুবকদের অভিযোগ, লক্ষ্মীর গাছকৌটো হাতে ওই তরুণীর এ রকম ছবি হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করেছে।

প্রাণের ভয়ে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার সকালে পাটুলির বাসিন্দা প্রীতম মিত্র নামে ওই আলোকচিত্রী কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানাতে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে দিয়েছে।
নগ্ন কনে
ফেসবুকে যেভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে ফটোগ্রাফারকে।

জানা গেছে, মূলত বিয়ের ছবি তোলার কাজ করেন প্রীতম। এজন্য তার রয়েছে একটি সংস্থাও। গত চার বছর ধরে পেশাগত ভাবেই ওই সংস্থাটি চালাচ্ছেন তিনি। পেশাদার এক মডেলের ওই বিতর্কিত ছবিটি প্রীতমই তাঁর এক বন্ধুর সংস্থার হয়ে গত ২১ আগস্ট তুলেছিলেন।

এরপর ক্যামেরিনা নামে একটি গ্রুপে ছবিটা পোস্ট করে ১০ মিনিটের মধ্যে মুছে দেন। কিন্তু তার মধ্যেই ছবিটা ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে ফটোগ্রাফারের নাম থাকায় প্রীতম ট্রোলড হতে থাকেন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের হিন্দুত্ববাদী পরিচয় দিয়ে এক দল যুবক প্রথমে কটূক্তি করা শুরু করেন। তাঁদের কয়েক জন তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দিতে থাকেন।

কেউ কেউ ছবিটিকে অপসংস্কৃতি, যৌনতার ছাপ ইত্যাদি বলে নিন্দা করেছেন। কেউ আবার প্রশংসা করেছেন কনসেপ্টের। কেউ শিল্পীর শিল্পকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। একদল বলছেন এসব মোটেও মেনে নেওয়া যায় না, বিবাহের মতো একটা পবিত্র বন্ধনকে এভাবে নগ্নতার আবরণ দিয়ে ছোট করা হয়েছে।

অন্যদলের মতে বিবাহ যে যৌনতার সামাজিক ছাড়পত্র তা-ই বোঝানো হয়েছে এই ছবির মধ্যে দিয়ে। যে যাই বলুক, সব মিলিয়ে স্যোশাল মিডিয়াতে নতুন সেনসেশন এখন এই ছবিটি। সেই সঙ্গে ফটোগ্রাফার প্রীতমও এখন দেশ-বিদেশে পরিচিত মুখ।

বি:দ্র: প্রতিটি লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুকপেজ-এ লাইক দিন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। যেকোন বিষয়ে জানতে চাইলে এবং আপনার কোন লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বিডি লাইফ এ যেয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন।

খবরগুলো আপনার ফেসবুক হোমপেজে নিয়মিত আপডেট পেতে লাইক করুন