প্রেগন্যান্ট না হওয়ার অজস্র কারণ রয়েছে। ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হোন যে উনি সমস্ত সম্ভাব্য কারণ পরীক্ষা করে দেখেছেন। নিচে লেখা কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখুন।
ক) আপনার বীর্যের স্পার্ম-কাউন্ট কি স্বাভাবিক? শুক্রাণুসমূহের গঠন ও গতিবিধিও কি স্বাভাবিক? আশা করি আপনার ডাক্তার এটা পরীক্ষা করেছিলেন।
খ) স্ত্রীর পিরিওড নিয়মিত হয় কি? অনিয়মিত পিরিওডের কথা ডাক্তারকে বলুন। পিরিওডের সময় খুব বেশি ব্যাথা হলে সেকথাও ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।
গ) প্রতি মাসের কোন সময়ে আপনার স্ত্রীর ওভিউলেশন বা ডিম্বাণু নির্গমন হয় সেটা জেনে নিন*। ওই সময় সেক্স করলে প্রেগন্যান্ট হবার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি।
ঘ) ওভিউলেশনের কতদিন পর আপনার স্ত্রীর পিরিওডের ব্লিডিং শুরু হয় সেটাও খেয়াল রাখুন। যদি ওভিউলেশনের পর দশদিনের থেকে কম সময়ে পিরিওড শুরু হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে শুক্রাণু-ডিম্বাণুর মিলন হলেও নিষিক্ত ডিম্বাণু শরীরের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে। ওভিউলেশনের দশদিনের থেকে কম সময়ে পিরিওড হলে ডাক্তারকে অবশ্যই সেকথা জানান।
ঙ) স্ত্রীর থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সেকথা ডাক্তারকে বলুন।
চ) আপনি বা আপনার স্ত্রী কি কোন ওষুধ খাচ্ছেন? কি কি ওষুধ আপনারা বর্তমানে খাচ্ছেন সেকথা ডাক্তারকে জানান। কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াতেও সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে।
ছ) মদ্যপান এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
জ) ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে বা কমে গেলেও গর্ভসঞ্চারে সমস্যা হতে পারে।
ঝ) যৌনসঙ্গমের সময় কোন রকম লুব্রিকেন্ট ব্যবহার না করাই ভাল, কারণ কিছু কিছু লুব্রিকেন্ট শুক্রাণুর ক্ষতি করে গর্ভসঞ্চারে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যৌনসঙ্গমের সময় লালারসও যেন যৌনাঙ্গের সংস্পর্শে না আসে, কারণ তাতেও শুক্রাণুর ক্ষতি হয়। নিতান্তই যদি আপনার স্ত্রীর যোনি ড্রাই (শুষ্ক) হয় তবে এমন লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করুন যাতে শুক্রাণুর কোন ক্ষতি হয় না।
ঞ) দু থেকে তিনদিন অন্তর সংগমে লিপ্ত হোন এবং হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকুন যাতে আপনার বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে ও শুক্রাণুর গুণাগুণ ভাল হয়। মনে রাখবেন যে বীর্যস্খলনের পর শুক্রাণু স্ত্রী জননাঙ্গে তিন থেকে ৫ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। অপরপক্ষে ডিম্বাণু কেবল ওভিউলেশনের পর ২৪ ঘন্টা জীবিত থাকে। তাই ওভিউলেশন হবার দিন বা তার আগের দুদিনের মধ্যে সেক্স করলে প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। যেহেতু ওভিউলেশন কবে হচ্ছে সেটা বুঝতে হামেশাই ভুল হয় তাই দু-তিনদিন অন্তর অন্তর নিয়মিত সেক্স করা প্রেগন্যান্ট হবার জন্য আদর্শ, তাতে ভাল মানের শুক্রাণুও পাওয়া যাবে আবার ওভিউলেশনও মিস হবে না।
ট) শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত হয়, তাই ঢিলে ঢালা অন্তর্বাস পরুন ও দিনে উপযুক্ত পরিমাণে জল পান করুন।
ঠ) আপনার বা আপনার স্ত্রীর কোন যৌনরোগ (STD – sexually transmitted diseases) রয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষা করুন। অনেক সময় কিছু যৌনরোগের সংক্রমণ ঘটলেও দীর্ঘদিন তার কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
ড) পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন আপনার স্ত্রীর ফ্যালোপিয়ান নল, জরায়ু, ডিম্বাশয় ইত্যাদিতে কোন অস্বাভাবিকত্ব রয়েছে কিনা? আশা করা যায় আপনার ডাক্তার এইসব পরীক্ষা করে দেখেছেন।
ঢ) PCOS – পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম মহিলাদের গর্ভসঞ্চারে সমস্যার অন্যতম কারণ। আলট্রাসোনোগ্রাফি করে ও ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হোন যে আপনার স্ত্রীর এই ধরণের সমস্যা নেই।
ণ) দুশ্চিন্তা ও অবসাদ মনে আসতে দেবেন না, তাতে যৌনজীবন ব্যাহত হয়ে গর্ভসঞ্চারে আরও বেশি অসুবিধা হবে। আনন্দে থাকুন, দুশ্চিন্তা পরিত্যাগ করুন ও ভাল থাকার চেষ্টা করুন। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নিয়মিত শারীরিক এক্সারসাইজ করুন ও পুষ্টিকর আহার গ্রহণ করুন। অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াই প্রেগন্যান্সিতে বিলম্ব হয়। এমতাবস্থায় হতাশ না হয়ে চেষ্টা করতে থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।
*বিঃদ্রঃ ১ – পিরিওডের কোন সময় ওভিউলেশন হচ্ছে সেটা বাড়িতে বসেই জানার একাধিক উপায় রয়েছে। সবথেকে নির্ভরযোগ্য উপায় হল “ওভিউলেশন প্রেডিকটর কিট (ovulation predictor kit)”। মোটামুটি পিরিওডের মোট দৈর্ঘ্য থেকে ১৭ দিন বাদ দিলে যত থাকে, পিরিওডের ব্লিডিং শুরু হবার তততম দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিন এই কিট ব্যবহার করে প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হয়। যেমন কারও পিরিওডের দৈর্ঘ্য ২৮ দিন হলে সে তার পিরিওডের রজঃস্রাব শুরু হবার দিন থেকে গুনে ১১ (= ২৮-১৭) নম্বর দিন থেকে এই কিট দিয়ে প্রস্রাব পরীক্ষা করতে পারে। এই কিট মূলত প্রস্রাবে LH হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করে। ওভিউলেশনের ১২ থেকে ৩৬ ঘন্টা আগে প্রস্রাবে LH হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং তার থেকেই বোঝা যায় যে সেটা গর্ভসঞ্চারের সব থেকে আদর্শ সময়। এছাড়াও সকালে ঘুম থেকে জেগে শোয়া অবস্থাতেই প্রতিদিন একই সময়ে থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে সেটা খাতায় নোট করে রাখলেও বোঝা সম্ভব কবে ওভিউলেশন হল। যেমন পিরিওডের প্রথম দিন থেকে এই তাপমাত্রা মাপলে দেখা যাবে যে প্রথমে কয়েকদিন তাপমাত্রা সামান্য কমে, অতঃপর কয়েকদিন সেটা একই থাকে এবং তার পর থেকে তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। যেদিন থেকে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে সেটাই মোটামুটি ওভিউলেশনের সময়। মনে রাখবেন যে সাধারণত পিরিওডের ১২ থেকে ১৯ তম দিনের মধ্যেই ওভিউলেশন ঘটে।
উল্লেখ্যঃ ২ – গর্ভসঞ্চারে সমস্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে স্ত্রীর এবং এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে স্বামীর শারীরিক সমস্যা দায়ী।
বি:দ্র: প্রতিটি লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুকপেজ-এ লাইক দিন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। যেকোন বিষয়ে জানতে চাইলে এবং আপনার কোন লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বিডি লাইফ এ যেয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন।