ভূ-স্বর্গ

আকাশ-কুয়াশা-মেঘ-নদী-পাথর-পাহাড়-ঝরনা-বন-নীল সবুজ পানি আর রহস্য-রোমাঞ্চ-ভয়—সব যদি একবারে পেতে চান, তাহলে জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসুন তিন্দু। সকালে ঘরের ভেতরে ফুঁ দিয়ে মেঘ সরিয়ে যখন দরজা খুঁজে বের করতে হয় তখন নিজেকে বারবার ধন্যবাদ দিতে হয় এই দেশে জন্মানোর জন্য।

ভূ-স্বর্গ বান্দরবানের থানচি থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে দুই ঘণ্টা ২০ মিনিট গেলেই পৌঁছে যাবেন তিন্দু। তিন্দু সম্পর্কে একটা বিশাল বই লিখলেও এর সৌন্দর্যের ছিটেফোঁটাও তুলে ধরা সম্ভব না। শুধু এতটুকু বলি, মেঘ-কুয়াশার দেশ তিন্দুর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো বর্ষাকালে এখানে নৌকায় চড়ে মেঘের ওপরে যাওয়া যায়, সাদাটে মেঘের ভেতর দিয়ে কিছুক্ষণ চললেই মাথা ভিজে যায়। এখানে শক্ত কঠিন পাথরকে সারাক্ষণই বুকে নিয়ে লক্ষ্য ছাড়া দৌড়ে বেড়ায় স্বচ্ছ পানির ঢল। নুড়ি পাথরে ছলাৎ ছলাৎ হাঁটতে হাঁটতেই ইচ্ছে করে হাঁটুপানিতে টুপ করে একটা ডুব দিয়ে হাপুস করে খেয়ে নিই পুরো একমুখ টলটলে পানি।

ভূ-স্বর্গ তিন্দুর দুই পাশ দিয়ে চলে গেছে দুটো ঝিরিপথ, সারা দিন সেখান থেকে কলকল করে ছুটে আসছে পাহাড়গলা স্বচ্ছ পানি। পানি আর পাথর মিলে এখানে যে নকশিকাঁথা তৈরি করেছে, কোথাও তার একচিলতে ছিদ্র নেই, নেই অমসৃণতা। তিন্দুপাড়ের পাথুরে সৈকত এখানে যোগ করেছে নতুন একটা মাত্রা। লাখ লাখ অসমান পাথর মিলে তৈরি করেছে অমসৃণ সমান একটা পায়ে চলা পথের, হাঁটতে হাঁটতে পথটা শেষ হলেই মন খারাপ হয়ে যায়, ইচ্ছে করে এখানেই কাটিয়ে দিই আরও একটা বসন্ত।

ভূ-স্বর্গ বান্দরবান-কন্যা তিন্দুকে ফেলে আরও ওপরের দিকে এগোতে থাকলে তখন মনে হবে মিনিটে মিনিটে বদলে যাচ্ছে পানির নিচের পাথুরে জগৎটা, ছোট ছোট পাথর যেন আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতে লাগল, উঠতে উঠতে নদীর বুক ফুঁড়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল তাদের মাথা। জায়গাটার নাম ‘বড় পাথর’। এখানে এসে নদীটা হয়ে গেছে সিঁড়ির মতন, এখানে পায়ের পাতাসমান পানিতে নেমে ঠেলেঠুলে নৌকাকে ওঠাতে হয় উপরের দিকে, সেখান থেকে আরও ওপরে একেবারে মেঘের কাছাকাছি। এখানে পাথর আর পানি মিলে ভরদুপুরে তৈরি করে রংধনুর। উত্তুরে হাওয়ায় ভাসতে থাকা সেই রংধনুগুলোকে নিজের কোলে আশ্রয় দেয় নদীর পাড়জুড়ে ঝুলতে থাকা গাছের সবুজ পাতারা। এখানে সূর্যোদয় দেখতে হয় ফুঁ দিয়ে মেঘ সরিয়ে, এখানে সূর্যাস্ত দেখতে হয় পানির চোখে চোখ রেখে।

ভূ-স্বর্গ পানি আর পাথরের এক সাদা-কালো জাদুঘর গড়ে উঠেছে এই তিন্দুকে ঘিরে। এখানে পাহাড়গলা পানিতে পা ডুবিয়ে চলতি পথের নতুন নতুন মাছের সঙ্গে সারা দিন আড্ডা দিলেও ক্লান্তির ঘাম ঝরবে না কানের লতি বেয়ে, এখানে ঘোলাটে মেঘের ভিড়ে সারাক্ষণ ভিজতে থাকলেও এতটুকু ময়লা লাগবে না গায়ে। জল-পাথরের আড্ডা জমে এখানে। এটা মেঘের দেশ, এটা কুয়াশার দেশ, এটা পাথুরে পানির দেশ, এটা তিন্দু, মেঘ-কুয়াশার তিন্দু।

ভূ-স্বর্গ পৃথিবী’তে তিন্দু-র মত এমন ঘুম-ঘুম সুন্দর জায়গা আর একটিও নেই… তিন্দু ইউনিয়ন, বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। প্রাকৃতিক আকর্ষণের কারণে এ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের কাছে অঞ্চলটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান।

ভূ-স্বর্গ কিভাবে যাবেনঃ
• ঢাকা – বান্দারবান যাওয়ার শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন এর বাস আছে ।রাত ১০ টায়/১১:৩০ টায় কলাবাগান/সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা। আমি শ্যামলি প্রেফার করব। নতুন বাস। তাদের সার্ভিস ও ভালো।

ভূ-স্বর্গ • ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়েও যাওয়া যায়। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের বাস ছাড়ে পুরবী/পুর্বানী ভাড়া ৬০-৮০টাকা।

ভূ-স্বর্গ • সকাল ৭:৩০ এর মধ্যেই বান্দারবান পৌছে যাবেন। এখান থেকে চান্দের গাড়ী নিয়ে সোজা থানচি। আপনি চান্দের গাড়ী রিজার্ভ করে নিতে পারেন। খরচ পরবে ৩০০০-৪০০০ টাকার মত। এছাড়া লোকাল চান্দের গাড়ী আছে, এটায় ভাড়া পড়বে ১০০-১৫০ টাকা করে। বান্দরবান শহর থেকে থানচি উপজেলা সদরের দূরত্ব ৮২ কিঃমিঃ।

ভূ-স্বর্গ • মাঝে বলিপাড়ায় কিছুক্ষন যাত্রা বিরতি চাইলে নিতে পারেন। সকালে রওনা দিলে দুপুরের মধ্যে থানচি পৌছে যাবেন। থানচি তে ব্রীজ বানানো হয়ে গিয়েছে, তাই ঐপাড়ে এখন গাড়ী যায়। সাংগু হেটে পার হয়ে থানচি বাজারে পৌছাবেন।

ভূ-স্বর্গ • সবার আগের কাজ বিজিবি- কে আপনার নাম ধাম দিয়ে তাদের পারমিশন নেয়া। বাজারেই খাওয়া দাওয়া করে নিতে পারেন। খরচ খুব বেশী পরবে না।

ভূ-স্বর্গ • এখন নৌকা আর মাঝি ঠিক করতে হবে। এখানে আলাদা কোন গাইড নাই। মাঝিরাই গাইডের কাজ করবে। খরচ ডিপেন্ড করবে আপনি কয়দিনের জন্য নৌকা রিজার্ভ করবেন। প্রতিদিনের জন্য প্রায় ৮০০-৯০০টাকা পড়বে।

ভূ-স্বর্গ • বান্দারবান-থানচি থেকে তিন্দু (এখানে রাতে থাকতে পারেন সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বারের বাসায়, আর যদি আপনার তাবু থাকে তাইলে ত কথাই নাই। খাওয়া দাওয়ার চিন্তা নাই। তারাই রেঁধে দিবে। মুরগীর ঝোল তারা অসাধারন রাঁধে। থাকা খাওয়ার খরচ প্রতিদিন ২০০টাকা করে পরবে, পার হেড)।

মোবাইল নেটওয়ার্কঃ
থানচি, তিন্দু দুই জায়গাতেই মোবাইল নেটওয়ার্ক (জিপি, রবি, টেলিটক, সিটিসেল) আছে। নিজের মোবাইল সাথে না নেয়াই ভালো। বাড়তি বোঝা বলে মনে হবে। দোকান থেকেই প্রয়োজনীয় কথা সেরে নিতে পারবেন। নিলেও নোকিয়া জাভা সেট নিয়ে যাবেন, চার্জ অনেক দিন থাকে।

সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ভাড়া এবং মূল্য পরিবর্তিত হতে পারে। এখানে একটা ধারনা দেওয়া হয়েছে।

তথ্যসূত্র: সামহয়ার ব্লগ ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট অবলম্বনে।

বি:দ্র: প্রতিটি লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুকপেজ-এ লাইক দিন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। যেকোন বিষয়ে জানতে চাইলে এবং আপনার কোন লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বিডি লাইফ এ যেয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন।

খবরগুলো আপনার ফেসবুক হোমপেজে নিয়মিত আপডেট পেতে লাইক করুন