গর্ভাবস্থায়-যৌনসঙ্গম

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে যে গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম বা সেক্স করা ঠিক কি না? ওই সময় মনে ভয় আসা স্বাভাবিক যে হয়তো যৌনসঙ্গমের ফলে গর্ভস্থ বাচ্চার কোন ক্ষতি হয়ে যাবে। আজ আমরা প্রেগন্যান্সিতে সেক্স বা গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম করা উচিৎ কি না সে বিষয়ে আলোচনা করব।

গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম সাধারণত নিরাপদ

কিছু বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম প্রায় সকল দম্পতির ক্ষেত্রেই নিরাপদ এবং সেটাও গর্ভাবস্থার পুরো সময় ধরে। তবে যদি আপনার ডাক্তার নিষেধ করে কিংবা আপনার প্রেগন্যান্সিতে কিছু সমস্যা যেমন গর্ভানাশের পূর্বঘটনা, ব্যাথা, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি থাকে তবে সেক্ষেত্রে যৌনসঙ্গমের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিৎ।

সুস্থ স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সিতে গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম ও গর্ভনাশ (মিসক্যারেজ) পরষ্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম ও সময়ের আগেই প্রসবেরও কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম করলে সময়ের আগেই প্রসব কিংবা গর্ভনাশ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় না।

দেখা গেছে যে যৌনসঙ্গমের ফলে নির্গত বীর্য যোনিতে শোষিত হলে বীর্যে অবস্থিত কিছু পদার্থের প্রভাবে গর্ভবতি মহিলার pre-eclamsia হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। উল্লেখ্য যে Pre-eclampsia হল এমন একটি রোগ যাতে সাধারণত গর্ভাবস্থার শেষ তিনমাসে গর্ভবতির রক্তচাপ ও মূত্রে প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এমতাবস্থায় সঠিক চিকিৎসা না হলে গর্ভস্থ বাচ্চা এবং গর্ভবতি মহিলার প্রভূত ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু যদি গর্ভস্থ ভ্রূণের পিতার বীর্য যৌনসঙ্গমের ফলে মায়ের শরীরে শোষিত হয় তাহলে পিতার জিনের প্রতি মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি অভ্যস্ত হয়ে পরে এবং pre-eclampsia হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। অতএব এইদিক থেকে দেখতে গেলে গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম উপকারী। এছাড়াও দেখা গেছে যে যৌনসঙ্গমের ফলে মনে আনন্দ থাকে ও প্রেগন্যান্ট হয়েছেন বলে একটা সুখানুভব হয়ে। গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গমের ফলে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধনও দৃঢ় হয় যা পরবর্তিতে বাচ্চা লালন-পালনে সহায়ক হয়। কিছু গবেষক এমনও মনে করেন যে যৌনসঙ্গবের ফলে স্খলিত বীর্যের প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক উপাদান সারভিক্সকে নমনীয় করে প্রসবে সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম করলে কি গর্ভস্থ বাচ্চার কোন ক্ষতি হয়

যদি আপনার স্বামীর বা সঙ্গীর কোন যৌনরোগ থাকে তবে সেক্ষেত্রে যৌনসঙ্গম না করাই শ্রেয়। এছাড়াও যদি আপনার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সত্যি হয় তাহলে গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম না করাই উচিৎ। ডাক্তারের সাথে পরমর্শ করুন।

১. যৌনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ,
২. তলপেটে ব্যাথা বা cramps,
৩. জল ভেঙ্গে যায়,
৪. আগের গর্ভনাশের ঘটনা,
৫. সার্ভিক্সের দূর্বলতা,
৬. সারভিক্সের নিকটে অবস্থিত অমরা বা প্লাসেন্টা (a low lying placenta)
৭. গর্ভে একাধিক বাচ্চা
যাদের উপরোক্ত সমস্যাগুলি রয়েছে তাদের বাদ দিলে বাকিদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম করলেও গর্ভস্থ ভ্রূণ বা বাচ্চার কোন ক্ষতি হয় না।

দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিনমাসে (চতুর্থ থেকে শুরু করে ষষ্ঠ মাস) গর্ভবতির যৌনক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। তবে এই ব্যাপারটি অনেকটাই ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভরশীল। অনেকের গর্ভাবস্থার পুরো সময় ধরেই সেক্সে করতে ভাল লাগে, অনেকের আবার গর্ভাবস্থায় সেক্সে করতে একেবারেই ভাল লাগে না। প্রসবের দুঃশ্চিন্তা, ভয়, পেটের আকার বৃদ্ধি পাওয়া, ধার্মিক ও সামাজিক রীতিনীতি ইত্যাদিও যৌনসুখ অনুভবে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম করলে (বিশেষত অর্গ্যাজম হলে) তার পরে কিছুক্ষণের জন্য জরায়ুর সংকোচন-প্রসারণ এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের নড়াচড়া অনুভূত হতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়াও যেহেতু গর্ভাবস্থায় সারভিক্সে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় তাই গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম করলে ওখানে থেকে সমান্য রক্তক্ষরণ হতে পারে। তবে এটাও চিন্তার কোন কারণ নয়। কিন্তু যদি বেশি রক্তক্ষরণ হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

যদি আপনার প্রেগন্যান্সিতে কোনরকম অস্বাভিকতা বা অসুবিধা না থাকে তবে শেষ তিনমাসেও যৌনসঙ্গম করা নিরাপদ। কিন্তু যদি আপনার গর্ভে একাধিক ভ্রূণ থাকে তবে গর্ভাবস্থার শেষ তিনমাসে যৌনসঙ্গম করা উচিৎ নয়। এছাড়াও গর্ভাবস্থার শেষ তিনমাসে চিৎ হয়ে শুয়ে সঙ্গম অনুচিৎ। আর গর্ভের জল ভেঙ্গে যাওয়ার পর সঙ্গম করা বা হস্তমৈথুন করাও একেবারেই অনুচিৎ কারণ তাতে সংক্রমণ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ওরাল সেক্সেও কোন বাধা নেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে যেন যোনির মধ্যে ফুঁ দিয়ে বাতাস না ঢোকানো হয়। কারণ ওই বাতার কোন রক্তবাহের মধ্যে প্রবেশ করলে ওই রক্তবাহে রক্তচলাচল ব্যাহত হয় যা গর্ভস্থ ভ্রূণ এবং গর্ভবতি উভয়ের পক্ষেই বিপদজনক হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম করার উপযুক্ত কিছু পজিশন

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে মিশনারী স্টাইল (পুরুষ নারীর উপরে উঠে যৌনসঙ্গম) করা সম্ভব হলেও পরের দিকে ক্রমবর্দ্ধমান পেটের দরুণ সেটা আর সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় নিম্নলিখিত সেক্স পজিশনগুলি চেষ্টা করা যেতে পারে,
১. স্পুন পজিশনঃ – দুজনে পাশপাশি শুতে হবে যাতে স্ত্রীর পেছনে স্বামী থাকে এবং পেছন থেকেই সঙ্গম করতে হবে। এই পজিশন অনেকটা দুটো চামচ পাশাপাশি রাখলে যেমন দেখায় ঠিক তেমন দেখতে। স্পুন পজিশনে লিঙ্গ পুরোটা যোনির ভেতরে ঢোকেনা তাই গর্ভাবস্থায় এটা আরামদায়ক হয়। কারণ গর্ভাবস্থায় যোনির শেষভাগ ও সার্ভিক্স অতিরিক্ত রক্তচলাচলের ফলে খুব সংবেদনশীল হয়ে যায় যাতে সামান্য স্পর্শেই ব্যাথানুভব হয়।
২. ওমেন-অন-টপ বা কাউগার্ল পজিশনঃ এই পজিশনে পুরুষ সঙ্গী চিৎ হয়ে শুয়ে থাকবে ও স্ত্রী তার উপরে বসে লিঙ্গ যোনির মধ্যে ঢোকাবে। যেহেতু এই অবস্থায় লিঙ্গ কতটা প্রবেশ করবে বা কত জোড়ে প্রবেশ করেবে সেটা পুরোপুরি স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল তাই এটাও গর্ভাবস্থার জন্য আদর্শ পজিশন।
৩. বিছানার প্রান্তেঃ স্ত্রী বিছানার প্রান্তে চিৎ হয়ে শুয়ে হাটু ভাজ করে পায়ের পাতা বিছানার উপরেই রাখবে। এই অবস্থায় নিতম্ব, যোনি এবং পায়ের পাতা বিছানার উপরে একেবারে শেষপ্রান্তে থাকবে এবং স্ত্রীর শরীরের বাকি অংশ বিছানার উপরে থাকবে। স্বামী দাঁড়িয়ে থেকে কিংবা হাটু গেড়ে বসে সঙ্গম করবে।
৪. চেয়ারে বসে সেক্সঃ স্বামী চেয়ারে বসে থাকবে এবং স্ত্রী স্বামীর দিকে মুখ করে তার কোলে গিয়ে বসে সঙ্গম করবে। ইচ্ছে হলে স্ত্রী তার পায়ের পাতা মাটিতেও রাখতে পারে।
৫. সোফায় সেক্সঃ সোফার উপরে হাটু মুড়ে নীল ডাউনের ভঙ্গিতে বসে হাত দিয়ে সোফার পেছনের হেলান দেওয়ার জায়গাটা ধরে থাকুন। স্বামী পেছন থেকে সঙ্গম করবে।

গর্ভাবস্থায় যৌনসঙ্গম করার সময় কোন লুব্রিকেন্ট জেল বা ক্রিম ব্যবহার না করাই উচিৎ। যদি একান্তই প্রয়োজন হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কিভাবে সঙ্গম করলে অসুবিধা হচ্ছে, কিভাবে সুবিধে হচ্ছে সেটা নিজেদের মাঝে আলোচনা করুন। সঙ্গমের পর যৌনাঙ্গ ও তার আশেপাশের অঞ্চল ভাল করে পরিষ্কার করুন। অযথা ভয় পাবেন না। যদি বিশেষ কোন অসুবিধা সৃষ্টি হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। প্রসবের পর সাধারণত ছয় সপ্তাহ অপেক্ষা করে তবেই স্বাভাবিক যৌনসঙ্গম শুরু করার পরামর্শ অধিকাংশ ডাক্তার দিয়ে থাকেন। ভাল থাকুন।

বি:দ্র: প্রতিটি লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুকপেজ-এ লাইক দিন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। যেকোন বিষয়ে জানতে চাইলে এবং আপনার কোন লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বিডি লাইফ এ যেয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন।

খবরগুলো আপনার ফেসবুক হোমপেজে নিয়মিত আপডেট পেতে লাইক করুন