রাসূলুল্লাহ সা:-এর জমানায় কয়েকটি মাত্র গ্রহ খালি চোখে দেখা যেত। ষোড়শ শতাব্দীতে টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর আবিষ্কৃত হয় অন্যান্য গ্রহগুলো। ইউরেনাস, নেপচুন এবং প্লুটো নামক গ্রহ তিনটি আবিষ্কৃত হয় যথাক্রমে ১৭৮১, ১৮৪৬ এবং ১৯৩০ সালে। প্লুটো পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যা নয়টি। কিন্তু আল কুরআনে বর্ণিত আর দুটো গ্রহ কোথায়?
চৌদ্দ শ’ বছরে বিজ্ঞানের বহু ধ্যানধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু আল কুরআনের শাশ্বত বাণী ও তথ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির কষ্টিপাথরে তা হয়ে উঠেছে আরো দীপ্তিময়। মহাকাশের অগ্রগতিতে তা আরো ভাস্বর। বিজ্ঞান এবং কারিগরি জ্ঞানের পথে মানুষ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে। মহাকাশে নিক্ষিপ্ত দ্রুত ভ্রাম্যমাণ উপগ্রহগুলোর মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে স্থাপিত হচ্ছে এক দেশের সাথে আরেক দেশের যোগাযোগ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই মানুষ হয়তো চিন্তাভাবনা করবে গ্রহ থকে গ্রহান্তরে ভ্রমণ এবং চাঁদ এমনকি মঙ্গলগ্রহে বসতি স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে। মানুষ হয়তো তা পারবে নয়তো পারবে না। কিন্তু নিঃসীম মহাশূন্যের রহস্যের সন্ধানে এগিয়ে যেতে আল কুরআনের ইঙ্গিত নিরন্তর থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে।
প্রথম দিকে মানুষ সৌরজগৎ নিয়েই চিন্তাভাবনা করত। যদিও বর্তমান যুগের মানুষের দৃষ্টি কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সি এবং তারকাপুঞ্জের প্রতি পরিব্যাপ্ত হয়েছে; তবুও বলা যায়, মানুষ এই সৌরজগৎ সম্বন্ধে পরিপূর্ণ জ্ঞান এখনো অর্জন করতে পারেনি। এমনকি এই পৃথিবী সম্বন্ধেও মানুষের জ্ঞান এখনো সম্পূর্ণ নয়। দীর্ঘকাল ধরে মানুষ মহাশূন্যে অনুসন্ধানে ব্যবহার করে আসছে টেলিস্কোপ। এখন মহাশূন্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে মনুষ্য নির্মিত বিভিন্ন উপগ্রহ এবং নভোযান। সেগুলোর সাহায্যে বিস্তার লাভ করেছে মহাশূন্য সম্বন্ধে মানুষের জ্ঞানের পরিধি।
আমরা এত দিন জেনে এসেছি সৌরজগতের গ্রহের সংখ্যা নয়টি। কিন্তু সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে আমাদের সৌরজগতে আরো গ্রহের অবস্থিতি। আল কুরআনের দিকে যদি এবার আমরা অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে তাকাই, তবে আমরা দেখতে পাই মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস এবং জোতির্বিজ্ঞান সম্বন্ধে তত্ত্বসমৃদ্ধ বহু স্পষ্ট আয়াত। সূরা ইউসুফ থেকে সৌরজগৎ সম্পর্কীয় একটি আয়াত উদ্ধৃত হলো-
“Behold! Joseph said to his father: “O my father! I did see eleven stars and the sun and the moon: I saw them prostrate themselves to me!”
‘হে পিতা আমি দেখেছিলাম এগারোটি তারকা (কাওকাব) সূর্য ও চন্দ্র। তাদের দেখেছি আমার প্রতি অবনত হতে।’
গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে চৌদ্দ শ’ বছর আগে আল কুরআনে সৌরজগৎ সম্পর্কে এক মহাতত্ত্ব জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে লক্ষণীয়, আরবি ‘কাওকাব’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এই শব্দটি দ্বারা শুধু নক্ষত্রকেই বোঝায় না, যে কোনো জোত্যিষ্ককেও বোঝায়। এই আয়াতে ‘কাওকাব’ শব্দটি দ্বারা গ্রহকেই বোঝানো হয়েছে। কারণ, সূর্যের এবং চন্দ্রের সম্পর্কিত জোতিষ্কগুলো গ্রহ, নক্ষত্র নয়। কাজেই সৌরজগতে এগারটি গ্রহের অবস্থিতির কথাই আল কুরআন ঘোষণা করেছে।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর জমানায় কয়েকটি মাত্র গ্রহ খালি চোখে দেখা যেত। ষোড়শ শতাব্দীতে টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর আবিষ্কৃত হয় অন্যান্য গ্রহগুলো। ইউরেনাস, নেপচুন এবং প্লুটো নামক গ্রহ তিনটি আবিষ্কৃত হয় যথাক্রমে ১৭৮১, ১৮৪৬ এবং ১৯৩০ সালে। প্লুটো পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যা নয়টি। কিন্তু আল কুরআনে বর্ণিত আর দুটো গ্রহ কোথায়?
আমেরিকার বৈজ্ঞানিকেরা আরো দুটি গ্রহ আবিষ্কার করেছেন। দশম গ্রহটি (যার নামকরণ করা হয়নি) ১৬০০০ এবং ৩২০০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্য থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। পৃথিবীর ওজনের পাঁচ গুণ ওজনবিশিষ্ট গ্রহটি ৭০০ বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। অন্য গ্রহটি ছোট। এই গ্রহগুলো আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন নাসার বৈজ্ঞানিক জন এন্ডারসন, ইউরোপীয় জোতির্বিদ ড. রিচার্ড ওয়েস্ট, ড. লুরেন্স টপস্তার।
ম্যালি নামের ছোট গ্রহটি চার বছর চুরাশি দিনে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এর কক্ষপথ মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথের মধ্যে অবস্থিত। জোতির্বিজ্ঞানের এই চরম উন্নতির যুগে যা আবিষ্কৃত হয়েছে তা চৌদ্দ শ’ বছর আগেই ঘোষণা করা হয়েছে আল কুরআনে, যখন বিজ্ঞান টেলিস্কোপ কিছুই ছিল না।
লেখক: ইবনে সাইজউদ্দীন
বি:দ্র: প্রতিটি লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুকপেজ-এ লাইক দিন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। যেকোন বিষয়ে জানতে চাইলে এবং আপনার কোন লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বিডি লাইফ এ যেয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন।