গর্ভপাত কিভাবে হয় সেটা মূলত নির্ভর করে গর্ভধারণের কতদিন পরে গর্ভপাত করা হচ্ছে তার উপর। গর্ভপাত ঔষধের সাহয্যেও হতে পারে কিংবা অস্ত্রোপচারের মাধ্যেমেও হতে পারে। গর্ভধারণের প্রথম তিনমাসে ঔষধ এবং অস্ত্রোপচার দুটোই মোটামুটি সমান কার্যকর – অর্থাৎ এদের যেকোন একটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তার পরবর্তী সময়েও ঔষধের মাধ্যমে গর্ভপাত সম্ভব, কিন্তু এই সময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গর্ভপাত হলে সাইড এফেক্টের সম্ভাবনা সাধারণত কম থাকে।
গর্ভপাতের পদ্ধতি আরেকটু বিস্তারিত বলতে গেলে প্রয়োজন গর্ভাবস্থার জেস্টেশনাল বয়েস সম্মন্ধে জ্ঞান। গর্ভাবস্থার জেস্টেশনাল বয়েস সাধারণত গণনা করা হয় (প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগে) শেষবার পিরিওড শুরু হওয়ার দিন থেকে। জেস্টেশনাল বয়েস ৯ সপ্তাহের (৬৩ দিন) থেকে কম হলে সাধারণত Mifepristone এবং misoprostol নামের দুটো ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রথম দিন ডাক্তারের কাছে গিয়ে Mifepristone খেতে হয়। এর দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে ডাক্তারের উপস্থিতিতে misoprostol খওয়ানো হয় বা যোনির মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। এর পর প্রায় চার ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করে রোগিনীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রায় ৭ থেকে ১০ দিনের মাথায় ডাক্তারের কাছে গিয়ে এটা নিশ্চিত হতে হয় যে গর্ভপাত হয়ে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই গর্ভপাত হয়ে যায়। গর্ভপাতের সময় স্বাভাবিক পিরিওডের সময় যেমন রক্তক্ষরণ হয় তেমন বা তার থেকে কিছু বেশি ক্ষরণ হতে পারে। তার সাথে তলপেটে ব্যাথা বা ক্র্যাম্প হতে পারে। কিন্তু যদি খুব বেশি রক্তক্ষরণ হয় (চার থেকে ৫ টি প্যাড প্রতি ঘন্টায় বা ২৪ ঘন্টায় ১২ টি বা তার থেকে বেশি প্যাড) বা সাথে জ্বর হয় তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ অবশ্য কর্তব্য। শতকরা ৫ শতাংশ মহিলার ক্ষেত্রে ঔষধের দ্বারা গর্ভপাত সফল হয় না। তাদের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারই একমাত্র রাস্তা। বস্তুতপক্ষে ৭ সপ্তাহের থেকে কম জেস্টেশনের ক্ষেত্রে উপরোক্ত দুটি ঔষধের মাধ্যেমে গর্ভপাত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গর্ভপাতের থেকে বেশি কার্যকারী। ওই দুটি ঔষধ ছাড়াও Methotrexate এবং misoprostol ব্যবহার করেও গর্ভপাত সম্ভব। তবে গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাসের পরেও ঔষধ ব্যবহার করে গর্ভপাত হতে পারে। বিস্তারিত জানতে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
গর্ভের জেস্টেশনাল বয়েস ১৫ সপ্তাহ পর্যন্ত হলে অস্ত্রোপচারেরে মাধ্যমে গর্ভপাতের সময় যোনির মাধ্যমে বিশেষ যন্ত্র (যেমন সিরিঞ্জ বা নল) ঢুকিয়ে গর্ভের বিভিন্ন পদার্থ যেমন ভ্রূণ, অমরা বা প্লাসেন্টা, বিভিন্ন পর্দা ইত্যাদি চোষণ বা শোষন করে বাইরে বের করে গর্ভপাত ঘটানো হয়। সাধারণত এই পদ্ধতির সময় সার্ভিক্স স্থানীয়ভাবে অসাড় করে নেওয়া হয়। গর্ভের বয়েস ১৫ সপ্তাহের থেকে বেশি হলে গর্ভপাতের পদ্ধতি আরও একটু জটিল হয়। কিন্তু সঠিক ডাক্তার ও চিকিৎসালয়ে গিয়ে তখনো নিরাপদেই গর্ভপাত সম্ভব।
উত্তর শেষ করার আগে আবারও বলছি গর্ভপাত করতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে কাজ করুন। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে গর্ভপাত একটি খুবই নিরাপদ পদ্ধতি – কোন বিশেষ সাইড এফেক্ট হয় না। কিন্তু হাতুরে ডাক্তার, ওঝা, বাজে ক্লিনিক বা নিজে নিজেই গর্ভনাশ করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যা, এমনকি মৃত্যু হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। আরও একটি পরামর্শ – যৌন সঙ্গমের সময় উপযুক্ত নিরোধ বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করুন, যাতে গর্ভপাতের প্রয়োজনই না হয়।
বি:দ্র: প্রতিটি লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুকপেজ-এ লাইক দিন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। যেকোন বিষয়ে জানতে চাইলে এবং আপনার কোন লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বিডি লাইফ এ যেয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন।