সর্দি কাশি হলেই ঘড়ির কাঁটা গুনে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া জরুরি নয়। অ্যান্টিবায়োটিকের থেকে ঘরোয়া পদ্ধতিতে সর্দি কাশির চিকিৎসা বেশি কার্যকর। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সহায়ক হতে পারে মধু।
এক গবেষণা থেকে জানা যায় যারা কাশির সমস্যায় ভুগছেন তাদের চিকিৎসায় অব্যর্থ ভূমিকা রাখতে পারে মধু। যেখানে অ্যান্টিবায়োটিক এতো ভাল কাজ করেনা। তবে কাশি বেশিরভাগ সময় দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনা আপনি ঠিক হয়ে যায়।
কাশি দূর করার উপায়ঃ
১. কাশি হলে বার বার হালকা গরম পানি পান করুন।
২. ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ছেড়ে দিন। তামাক কাশিকে আরো শক্তিশালী করে।
৩. সবসময় উষ্ণ থাকুন। যেহেতু ঠান্ডা কাশির একটি উপলক্ষ তাই কাশি হলে উষ্ণ থাকবেন।
৪. মেন্থল লজেন্স চুষতে পারেন। এটা গলা থেকে কফ গুলোকে বের করতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে।
৫. কাশি হলে গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এটা শরীরের ইন্দ্রিয় সমূহ থেকে কাশির জীবাণুগুলোকে বের করে দেয়।
কাশি হওয়ার পূর্বে গলা ভেতরে চুলকানি, বুকে ব্যাথা এবং নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে। এর জন্য বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক সিরাপ না খেয়ে কাশির প্রাকৃতিক ঔষধ খেতে পারেন। এতে কোন পার্শ প্রতিক্রিয়া নেই এবং এসব ঔষধ খেতেও সুস্বাদু।
কাশির প্রাকৃতিক ঔষধঃ
মধুঃ মধুকে কাশির মহাঔষধ বলা যেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়, মধু কখনো কখনো কাশিরোধী ওষুধগুলোর চেয়েও ভালো কাজ করে।
১. কাশি দূর করতে দিন ৩ বার ১ টেবিল চামচ কাঁচা মধু (Raw Honey) খান। কাশির কারণে ঘুমাতে সমস্যা হলে শোয়ার আগে ১ টেবিল চামচ মধু খেয়ে নিন। বাচ্চাদের ১ চা চামচ করে খাওয়ান।
২. গরম পানিতে সামান্য মধু, লেবুর রস আর আদার রসের মিশ্রণ কফ এবং গলা ব্যথা নিরাময়ের জন্য বহুল প্রচলিত এই ঘরোয়া পানীয়।
৩. এক গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ গোলমরিচের গুঁড়া এবং ১ টেবিল চামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে নিন। হালকা কুসুম পানি ব্যবহার করতে পারেন। এই পানীয় দিনে দুই বার ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি কাশি সেরে যাবে।
৪. ২ গ্লাস পানির সাথে ৩ টেবিল চামচ আদা বাটা এবং ১ টেবিল চামচ শুকনা মেন্থল বা পুদিনা পাতা মিশিয়ে দিয়ে চুলায় সিদ্ধ করতে দিন। পানি ফুটে ওঠার পর যতক্ষণ পর্যন্ত পানি ঘন না হয় ততক্ষণ হালকা জ্বালে চুলায় রাখুন। এর পর যখন পানি অর্ধেক হয়ে আসবে তখন চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হওয়ার পর ১ কাপ মধু মিশিয়ে ভাল করে নাড়ানাড়ি করুন। ৩ ঘণ্টা পর পর এক টেবিল চামচ করে এই ঔষধ খেতে হবে। এটা ঠান্ডা এবং শুষ্ক স্থানে রাখুন।
৫. খুসখুসে কাশি ভাল করার জন্য গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে পান করুন। এতে বারবার কাশির কারণে বুক ব্যাথাও ভাল হবে। ভাল ফলাফলের জন্য ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।
যষ্ঠিমধুঃ যষ্ঠিমধু ভেতর থেকে কাশি বের করে ফেলার পাশাপাশি গলাকে পরিষ্কার করে। ফলে গলাভাঙা এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট থাকলে সেটাও দূর হয়। ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে দুই টেবিল চামচ যষ্ঠিমধুর গুঁড়া বা সমপরিমাণ যষ্ঠিমধুর চলা দিন। ১০-১৫ মিনিট চুলায় রেখে দিন। এর পর কাপে ঢেলে চায়ের মত করে পান করুন। এই চা দিনে দুইবার করে পান করবেন।
লবণ পানি দিয়ে গার্গলঃ কাশি দূর করতে এটা অনেক জনপ্রিয় এবং প্রাচীন পদ্ধতি। লবণ পানি গারগিল করার ফলে গলা অনেক পরিষ্কার এবং আরামদায়ক হয়। এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ লবণ দিয়ে গরম করে নিন। যতক্ষণ না লবণ পানির সাথে একবারে মিশে যায়। এরপর হালকা গরম পানি মুখে নিয়ে ১৫ সেকেন্ড ভালভাবে গড়গড়া করতে থাকুন। দিনে ৩ বার এটা করতে পারেন। ঘুমানোর আগে করলে কাশির কারণে ঘুমের সমস্যা থেকে আরাম পাওয়া যায়।
উপরের কাশি ভাল করার প্রাকৃতিক ঔষধগুলো পার্শ প্রতিক্রিয়া ছারাই নানা ধরনের কফ দূর করতে সক্ষম। বাজারে পাওয়া বড়ি বা সিরাপে কম বেশি পার্শ প্রতিক্রিয়া আছে। তবে আপনার যদি টানা দুই সপ্তাহের বেশি কাশি থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
রোগ হিসেবে কাশিকে মোটেও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কেননা এটা হাঁপানি, যক্ষ্মা, কন্ঠনালী ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষন হতে পারে। তবে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রয়োগের ফলে মানুষের শরীর ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে পড়ে। ফলে অনেক ধরণের ইনফেকশন সারিয়ে তোলা কঠিন হয়ে যায়। তাই চিকিৎসকের কাছে যাবার আগে নিজে নিজে রোগ সেরে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভাল।
বি:দ্র: প্রতিটি লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুকপেজ-এ লাইক দিন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। যেকোন বিষয়ে জানতে চাইলে এবং আপনার কোন লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বিডি লাইফ এ যেয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন।