বিয়ের আ্ইনগত বয়স, উপযুক্ত বয়স ও বাস্তব প্রেক্ষাপট
বড় বড় লেখকদের সাথে আমরা যারা অলেখক তাদের পার্থক্য এই যে, তারা যা ভাবেন তা লিখে রাখেন। আর আমরা অলেখকরা সেগুলো লিখে রাখি না।
সমসাময়িক জনপ্রিয় লেখকদের সাথে আমাদের অলেখকদের তুলনা তারা যা ভাবেন তা বাণিজ্যিকভাবে ভাবেন আর আমরা অলেখকরা নিজেদের খেয়াল খুশি মত ভাবি কিন্তু জনপ্রিয় লেখকদের মত লিখে রাখি না।
পরীক্ষার খাতায় আর ক্লাস লেকচার লেখার বাইরে বিশেষ লেখালেখির অভ্যাস নেই। তাই আমি ও আমার বন্ধুদের অনেক দিনের মনের ভাবনা গুলোকে কালির আকৃতি দিতে চেষ্টা করলাম। হয়ত বার বার পড়ে পাঠোদ্ধার করতে হতে পারে। কারণ এখন প্রচলিত লেখকদের মত ভিডিও চিত্র দেখতে দেখতে কলমের লেখা লিখে বা পড়ে সবকিছু বোঝানোর ক্ষমতা আমাদের সকলেরই প্রা্য় হ্রাস পেয়েছে।
সমস্যাটির ভিডিও চিত্রটি নির্মাণ করতে পারলে আপনাদের এতো কষ্ট দিয়ে বার বার পড়ে পাঠোদ্ধার করতে বলতাম না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনা করলেই বেশি খুশি হব।
কোন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তুত বাগান’ নামক আলোচিত একটি জায়গা আছে। আলোচিত বলছি এই জন্য যে, এই জায়গাটি তুত চাষের চেয়ে প্রেম চাষে অনেক এগিয়ে । একটি সাম্প্রতিক ঘটনা বলি- গত কয়েকদিন আগে এই স্থানে অবস্থানকালীন কতকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর আরেক ছেলের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে। ছেলেটির অপরাধ সে এই তুত বাগানে বসে তার প্রেমিকার ঠোটে চুমু খাচ্ছিল, হয়ত সাথে একটু স্পর্শ সুখও নিচ্ছিল। উভয়ের বয়স ২৩ এর কাছাকাছি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আনাচে কানাচে লোকালয়হীন জায়গায় সম্প্রতি ব্যবহৃত কনডম পরে থাকতে দেখা যায়।
আজ বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী দুদিন হরতাল। আমার কাছে সদ্য এইচ.এস.সি পাশকৃত শিক্ষার্থীরা পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার প্রত্যাশায়, আমি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি কিনা তাই ! এরা অধিকাংশই শহরের বাইরের ছেলে । ফোনে এদেরে কয়েকজন জানাল তারা আগামী দুদিন পড়বে না। আমি তাদের সাথে ফ্রি কিন্তু স্ট্রান্ডার্ড ওয়েতে মিশি। তাই তাদের ভিতরের –বাইরের অনেক খবরই জানি। আগামী হরতালকে সামনে রেখে নিজ নিজ এলাকায় নিজ নিজ প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে যাচেছ ওরা। সেখানে গিয়ে হয়ত তারাও হারাতে পারে তাদের মোবাইল ফোনটি। পড়তে পারে সামাজিক অনিরাপত্তার কবলে। কেননা ডেটিং এখন মিটিং এর চেয়ে বেশি প্রচলিত একটি শব্দ। যেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনিরাপধ।
কথাগুলো অপ্রাসঙ্গিক মনে করার কোন কারণ নেই। আমাদের দেশের রাজনৈতিক আইনগুলোর মতই সামাজিক আইনেরও প্রয়োগ তেমন একটা দেখা যায় না। দেশের প্রচলিত আইনে আছে ছেলেদের বিয়ের নূন্যতম বয়স ২১ আর মেয়েদের ১৮| ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ৩বছর কম। বিভিন্ন জ্ঞান বিজ্ঞানের বইয়ে পড়েছি যে,মেয়েদের কামনা-বাসনার চাহিদা ছেলেদের তুলনায় কিছুটা আগে জন্মায়। তাই হয়ত ৩ বছরের এই আইনি ব্যবধান। যাইহোক আমার মনে হয় আইনে যদি লেখা থাকত যে, ‘বাধ্যতামূলক বিয়ের বয়স ছেলেদের ২১ এবং মেয়েদের ১৮, অবশ্য এটা শারিরীক সুস্থতা ও বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে’| তবে এ বিশ্ব দেখত বাঙালির উন্নতি, কতশত নতুন সৃষ্টি।
আমরা অধিকাংশই মুসলমান। তাই কামনার-বাসনার চাহিদা বিবাহের মাধ্যমে নিশ্চিত করাই উত্তম। তাই ফ্রি বা উম্মু্ক্ত যৌনতার কথা না ভাবাই ভালো। কিন্তু কী হচ্ছে এই দেশে! কিছু কী থেমে আছে! (কিছু হয়ত ব্যতিক্রমও আছে) এদেশের যুবক ছেলে-মেয়েদের মেধার বিশাল একটা্ অংশ ব্যয় হয় এই কামনা –বাসনা, যৌনতা, প্রেম, নেশা, গোপন সম্পর্ক ও মিলামিশা নিয়ে ভেবে। হয়ত বুঝতেই পারছেন আমি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান চাইব ‘সামাজিক বিবাহ’ পদ্ধতির মাধ্যমে । ইতোমধ্যে অনেকেই হয়ত ‘প্রতিষ্ঠিত হওয়া’ এ প্রচলিত কথাটি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। ভাবছেন…….প্রতিষ্ঠিত হওয়া ছাড়া বিয়ে !!!!! ওরে বাপরে !!!! না। না। অধিকাংশ ধারণা যে, বিয়ের পরে বাচ্চা জন্মদান ছাড়া বোধহয় আর বিশেষ কিছু করা সম্ভব না। একটা উদাহরণ দিই, খুব কাছের একটা বড় ভাই, বর্তমানে কোন এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। উনি বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন প্রথম বর্ষ পাশই করতে পারছিলেন না, বিভিন্ন ঘাটে নৌকা ভিড়াতে গিয়ে। তারপর ১ম বর্ষেই পূণ:ভর্তি নিয়ে গোপনে বিয়ে করলেন। পরে অবশ্য পরিবার তাদের বিয়েকে মেনে নিয়েছিল ও আর্থিকভাবে সহায়তা করেছিল। অত:পর তখন থেকে তিনি ওই বিভাগে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এবং পরিশেষে ফেকাল্টিতে রেকর্ড মার্কস নিয়ে ফার্স্ট হয়েছে। নিজের বিভাগেই বর্তমানে শিক্ষক হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার সহধর্মিণীও বর্তমানে নিজ কর্মক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। এরকম উদাহরণ হাজারও আছে যারা সমাজের তথাকথিত প্রতিষ্ঠা পরবর্তী বিয়ের নিয়ম ভেঙ্গে বিয়ে করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়েছেন পরিবার ও সমাজকে। লেখার পরিধি বেশি হবে তাই আর ব্যক্ত করছি না।
কোন রকম প্রতিষ্ঠা ছাড়াই বিয়ের পরের কোর্সগুলো পড়ে না করে ফেলছে এখনকার ছেলে-মেয়েরা। বলে রাখি আমি ব্যতিক্রমের বাইরের কথা বলছি। তবে অধিকাংশের কথা। আমাদের বাবা-মায়ের জন্য একটি বিশেষ আইন দরকার, ”—–(নির্দিষ্ট একটি বয়স) এর পূর্বেই আপনার ছেলেমেয়েকে বিয়ে দিয়ে সমাজকে অস্থিরতার হাত থেকে রক্ষা করুন”- এই শিরোনামে।
আমি বাল্যবিবাহরে কথা বলছি না, উপযুক্ত বয়সের বিবাহের কথা বলছি, যেটা সরকার নির্ধারিত বিয়ের নূন্যতম বয়স সেটাই হতে পারে বিয়ের উপযুক্ত বয়স। এখন আপনরা অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন একটি ছেলের উপর এতো কমবয়সেই একটি মেয়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ! কঠিন ! না। কঠিন না। আমি বলছি, মেয়েটি মেয়েটির পরিবারেই থাকুক, ছেলেটি ছেলেটির পরিবারেই। চালিয়ে যাক তাদের পড়াশোনা। গড়ুক তাদের সোনালী ভবিষ্যত। শুধু পারিবারিকভাবেই আপতত তাদের কামনা-বাসনা মিটানোর ব্যবস্থাটা করা হোক-লিভ টুগেদার এর মাধ্যমে। তাহলে কী হবে, পরিবারের বাইরে অনিরাপধ জায়গায়, অনিরাপধভাবে সম্পর্কগুলো গড়ে উঠবে না আর হঠাৎ করেই ভাঙবে না । যদি এটা করা হয় তাহলে প্রত্যেকে একটা সুস্থ, সামাজিক, নিরাপদ, ধর্মীয় মর্যাদায় তাদের এই মৌলিক চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে। যেটা এখন হচ্ছে অসুস্থ, অসামাজিক, অনিরাপদ ও বিধর্মীভাবে। আমার মনে হয় যে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা এই মৌলিক চাহিদাগুলোর সাথে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে যৌনতাকেও অ্ন্তুভুর্ক্ত করা উচিত। তাই কামানা-বাসনাটাকে মৌলিক চাহিদাই বললাম।
কেউ কেউ হয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আসবেন এই উপযু্ক্ত বয়সের বিবাহ ঠেকাতে। না ভাই সেই ২০০ বছর আগের নানা-দাদার সময় এখন আর নেই যে, বিয়ের পর থেকেই অবিরত বাচ্চা জন্মদান । এখন বহু প্রচলিত সু্স্থ, নিরাপদ পদ্ধতি চালু রয়েছে জন্মদান প্রতিরোধে। বাবা মায়ের মুখের বুলি ‘প্রতিষ্ঠিত হওয়া’ এটা অমূলক, তবে বাচ্চা জন্মদানের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত হবার বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য। বিয়ে ছাড়াই বাবা-মায়ের দেওয়া খরচেই দেদারছে এখনকার ছেলে-মেয়েরা চালিয়ে যাচেছ তাদের গোপন সম্পর্ক, গোপন মেলামেশা। আমি বলছি এ সম্পর্ক ও মেলামেশার ব্যাপারে বা্বা-মায়ের অগ্রণী ভূমিকাই পার অনিরাপদকে নিরপাদ করতে, অস্থিরতাকে স্থির করতে, অসমাজিককে সামাজিক করতে, ধর্মবিরোধী কাজগুলোকে ধর্মীয় করতে সর্বোপরী এই অস্থায়ী গোপন সম্পর্কগুলোকে স্থায়ী ও মধুর করতে। ৩২ বা ৩৫ বছর পর বিয়ে অত:পর টপাটপ ২ বা ৩টা বাচ্চা জন্মদান এটা কোন সিস্টেম হতে পারে না। এই দীর্ঘ বয়স পাড়ি দিয়ে তখন আর একে অপরকে দেবার মত বিশেষ কিছু অবশিষ্ট থাকে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। কিছু ব্যতিক্রম হয়ত থাকতে পারে।
কামনা-বাসনার উপযু্ক্ত পরিতৃপ্তি ছাড়া মেধার কোন কিছুই সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এজন্য ইউরোপ-আমেরিকার লোকজন যৌনজীবনে নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার সাথে সন্তুষ্টি হবার পর দেশ ও দশের জন্য বিভিন্ন সৃজনশীলকর্ম সৃস্টি করতে সক্ষম হচেছ, রাখছে তাদের অবদান।
এ জন্য আমার মনে হয় যৌনজীবনে অতৃপ্ত বা বঞ্চিত একজন মানুষ কখনোই সামাজিকজীবনে কোন অবদান রাখতে পারে না। যতক্ষন না সে শারীরিকভাবে অক্ষম বা পরিতৃপ্ত হচেছ। আমাদের সংস্কৃতি, চারপাশ, মিডিয়া আমাদেরকে যৌনতার প্রতি মোহিত করে তুলেছে। অত:পর পরিপূর্ণ নিরাপদ, সুস্থ, সামাজিক যৌন জীবন ছাড়া এই উপযু্ক্ত বয়সে অধীকাংশেরই পরিপূর্ণ মেধা বিকাশ সম্ভাবনা, সম্ভব না কোন নুতন সৃষ্টির।
আমার কথাগুলোর বিরোধীতা করবে দুই ধরনের লোক।
- যাদেরকে আমি আমার মনের কথা বোঝাতে পারিনি।
- যারা উপযুক্ত বয়স হওয়া সত্বেও যৌনজীবনে এখনও অসুস্থ বা অপরিপক্ক।
- আর অধিকাংশই সবকিছু বুঝতে পেরেও কোন মতামত প্রকাশ করবে না কারণ আমরা এখনও উপযুক্ত পরিমাণে সামাজিক হয়নি।
বি:দ্র: প্রতিটি লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুকপেজ-এ লাইক দিন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। যেকোন বিষয়ে জানতে চাইলে এবং আপনার কোন লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বিডি লাইফ এ যেয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন।