আবুল

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার আবুল বাজনদারের দুই হাতের তালু ও ১০টি আঙ্গুল জুড়ে লম্বা লম্বা মাংস পিন্ড, গাছের শেকড়ের মতো দেখতে নখের মতো শক্ত। গত দশ বছর ধরে প্রতি মুহূর্ত কাটছে তার অসহ্য যন্ত্রণায়। চিকিৎসার জন্য ভারতসহ গেছেন দেশের বিভিন্ন চিকিৎসকের নিকট। কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু হাতের নয়, দু’টি পায়ের দশটি আঙ্গুলের অবস্থা একই রকম। রোগ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন বিরল এইরোগ আগে কখনও দেখেননি।

এদিকে অর্থের অভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারছে না। চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ বিত্তবানদের নিকট সহায়তা চেয়েছেন। পাইকগাছা উপজেলা সদরের ৫নং ওয়ার্ডের সরল গ্রামের (মুক্ত কমিশনারের বাড়ির পাশে) ছোট্ট কুড়ে ঘরে গিয়ে রোগে আক্রান্ত আবুল, তার স্ত্রী এবং বাবা-মা’র সাথে কথা হয়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কেঁদে ওঠেন। আবুলের বাবা মানিক বাজনদার ও তার মা আমেনা বেগম জানান, ভ্যান চালিয়েই যে রোজগার হয় আর স্ত্রী আমেনা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেই চলছিল তাদের সংসার।

আবুলআর্থিক সমস্যায় ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে না পারলেও বাপ-বেটা মিলে ভ্যান চালিয়ে সংসার চলছিল ভালোই। ২০০৫ সালে আবুলের বয়স ১৫ বছর। ওই বছর বৃষ্টির সময় চারদিকে পানিতে সয়লাব। বাড়ির ওঠানেও জলাবদ্ধতা। এভাবে পানির মধ্যে কয়েক দিন ভ্যান চালানোর এক পর্যায়ে হাতে পায়ে আঁচিলের মত গোটা দেখা দেয়। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে এখন সেটি ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওঝা-বৈদ্য, ডাক্তার-কবিরাজ করেও ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে ভয়ঙ্কর রূপ নেয় হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ। ধীরে ধীরে কর্মঠ ও সামর্থ্যবান যুবক আবুলহয়ে পরে জড়-অথর্ব এক মানুষ। আর্থিক অনটনে ভালো ডাক্তার দেখাতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেয় আবুল। সেখান থেকে পাইকগাছা হাসপাতালে, গ্রামের কবিরাজ-বৈদ্য দেখিয়েছেন। এতে সামান্য কমলেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি। এর এক বছরের মধ্যেই আবুলের হাতের তালুতে ও পায়ে ধীরে ধীরে গাছের শ্বাসমূলের মত গজাতে থাকে। ক্রমান্বয়ে বিভৎস্য রূপ নেয় হাত ও পা। এতে ভীতো হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেন এখানে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। তাকে ভারতে বা অন্য কোনো দেশে উন্নত চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। বিত্তবানদের সহায়তায় তিন দফায় ভারতের কলকাতায় চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোনো সুফল পাননি। এমন কি ডাক্তাররা আবুলের রোগ চিহ্নিত করতে পারেনি।

এ ব্যাপারে খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বিধান কুমার গোস্বামী জানান, বিরল ও ভয়ঙ্কর এ ধরনের রোগ ইতিপূর্বে দেশের কোথাও দেখা যায়নি। এ ধরনের রোগীর সন্ধান পাওয়ায় সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। একই হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ শেখ নিশাত আবদুল্লাহ জানান, এ ধরনের রোগী তিনি ইতিপূর্বে দেখেননি বা শোনেননি। তবে তিনি প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে আক্রান্ত আবুল বাজনদারের হাতের কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করতে পারবেন বলে আশাবাদী। তবে সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। যা আবুলের গরীববাবা-মার পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। তাই তারা প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্তবানদের নিকট আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন।

বি:দ্র: প্রতিটি লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুকপেজ-এ লাইক দিন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। যেকোন বিষয়ে জানতে চাইলে এবং আপনার কোন লেখা প্রকাশ করতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ বিডি লাইফ এ যেয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন।

খবরগুলো আপনার ফেসবুক হোমপেজে নিয়মিত আপডেট পেতে লাইক করুন